গ্রাফিক ডিজাইন কিভাবে শিখবেনকোথায় শিখবেন?

গ্রাফিক ডিজাইন বর্তমানে বেশ জনপ্রিয় একটি পেশাসম্মানজনক এবং রয়েছে ঝামেলা বিহীন কর্মক্ষেত্র। এই পেশা অত্যাধিক জনপ্রিয় হওয়ার আরেকটি মুল কারণ হচ্ছে গ্রাফিক ডিজাইনারদের কর্মক্ষেত্র দেশের গণ্ডি পেরিয়ে আন্তর্জাতিক জব মার্কেট।
ডিজাইনের আন্তর্জাতিক কর্মক্ষেত্রকে আমরা ফ্রীল্যাঞ্চিং নামেও বলে থাকি।

আপনি গ্রাফিক ডিজাইন শিখার বিষয়ে আগ্রহী হলে আপনাকে বেশ কিছু বিষয়ে জানতে হবে।
যাতে করে আপনি সহজে পরিকল্পনা করতে পারেন।
 এই পোস্টে আমি আপনাকে ধারণা দেওয়ার চেষ্টা করবো গ্রাফিক ডিজাইনের কর্ম ক্ষেত্রগ্রাফিক ডিজাইন কোথায় এবং কিভাবে শিখবেনডিজাইনার হিসাবে কেমন টাকা আয় করা যায় এবং ডিজাইনারদের শিক্ষাগত যোগ্যতা কেমন লাগে।

গ্রাফিক্স ডিজাইন vs গ্রাফিক ডিজাইন

বাংলাদেশে গ্রাফিক ডিজাইনকে গ্রাফিক্স ডিজাইন বলা হয়। গ্রাফিক্স ডিজাইন শব্দটি সঠিক নয়।
গ্রাফিক্স শব্দটি সঠিক হবে যখন আপনি কম্পিউটারের গ্রাফিক্স কার্ডকে বলা হয় তখন সঠিক।
 অথবা যখন বলা হবে কম্পিউটার গ্রাফিক্স।
 ডিজিটাল স্ক্রিনে যা দেখা যায় সেটা গ্রাফিক্স এডাপ্টারের মাধ্যমে দেখানো হয়।
কিন্তু যখন ডিজাইনের ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়তখন অবশ্যই বলতে হবে গ্রাফিক ডিজাইন বা গ্রাফিক ডিজাইনার। আপনি দেখবেন ইংলিশে শব্দগুলো এমন ভাবে লেখা হয়: Computer Graphics, Graphics Card, বাট ডিজাইনারের ক্ষেত্রে Graphic Design, Graphic Designer লিখা হয়।
 আশা করি ভুল বুঝতে পেরেছেন।

বাংলাদেশে গ্রাফিক ডিজাইনারদের কর্মক্ষেত্র  সম্ভাবনা

দেশের প্রায় প্রতিটা ছোটবড় কর্পোরেট এবং বিজনেস প্রতিষ্ঠানে গ্রাফিক ডিজাইনারের চাহিদা রয়েছে। এই ছাড়াও রয়েছে অসংখ্য ডিজাইন হাউজ।
 বর্তমানে ইন্টারনেট বিজনেস এর যুগে প্রত্যেকটা প্রতিষ্ঠান সোশ্যাল মিডিয়ায় তাদের পনের প্রচারের জন্যে নিয়মিতই ডিজাইনের প্রয়োজন হয়তাহলে বুঝতেই পারছেন বাংলাদেশে এর কত বিশাল কর্মক্ষেত্র রয়েছে।

গ্রাফিক ডিজাইনারদের আন্তর্জাতিক কর্মক্ষেত্র (ফ্রিল্যান্সিং)

বর্তমানে ফ্রীল্যাঞ্চিং শব্দটি মোটেও অপরিচিত নয়।
ফ্রীল্যাঞ্চিং পেশার ক্ষেত্রে গ্রাফিক ডিজাইন অন্যতম একটি পেশা।
কারণ গ্রাফিক ডিজাইনাররা একই সাথে একটিভ এবং পেসিভ আর্নিং করতে পারে।

 ডিজাইনারদের একটিভ আয় এর সব থেকে বড় কর্মক্ষেত্রগুলা হচ্ছে আপওয়ার্ক এবং ফাইভার মার্কেটপ্লেস। পেসিভ আয়ের জন্যও অনেক মার্কেটপ্লেস রয়েছেতার মধ্যে গ্রাফিকরিভার অন্যতম। এছাড়াও আমাদের ক্রিয়েটিভ ক্লেন মেম্বারদের জন্যে রয়েছে গ্রাফিক রিজার্ভ।

গ্রাফিক ডিজাইনারদের আয় কেমনমাসে কত টাকা আয় করে?

গ্রাফিক ডিজাইনারদের দেশীয় প্রতিষ্ঠান গুলোতে বর্তমানে ১৫,০০০ থেকে ৮০ হাজার টাকা পর্যন্ত মাসিক বেতন হয়ে থাকে।

আন্তর্জাতিক মার্কেটে একজন ডিজাইনার একটিভ এবং পেসিভ আয়ের মাধ্যমে ২০,০০০ থেকে শুরু করে ২,০০,০০০ বা ততোধিক টাকা আয় করতে পারে।
 এই ক্ষেত্রে তার যোগ্যতা এবং কমিউনিকেশন দক্ষতার উপর তার আয়ের পরিমাণ নির্ভর করে।

গ্রাফিক ডিজাইন প্রশিক্ষণ কোথায় এবং কিভাবে?

আপনি গ্রাফিক ডিজাইন শিখতে আগ্রহী হলে আপনকে প্রথমে জানতে হবে ডিজাইনের জন্য কি কি  সফটওয়্যার প্রয়োজন হয়। 
ওই সফটওয়্যারগুলোর বেসিক ব্যাবহার আপনাকে প্রথমে ঘরে বসেই জানাটা উত্তম।
কারণআপনি কোন প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হয়ে ৪০-৫০ টা ক্লাসের মাধ্যমে বেসিক থেকে শিখাটা প্রায় অসম্ভববরং আপনি হয়ত  - টা ক্লাস করার পর আগ্রহ হারিয়ে ফেলবেন।
দেশে গ্রাফিক ডিজাইন শিখানোর জন্য হাজারো আটি প্রতিষ্ঠান রয়েছেআপনি কোথাও ভর্তি হওয়ার আগে তাদের সম্পর্কে এবং ট্রেইনার সম্পর্কে ভালোভাবে জেনে বুঝে তার পর এ্যাডমিশন নিবেন।
শুধু মাত্র তাদের বিজ্ঞাপন বা ছাত্রদের শিখিয়ে দেওয়া ভিডিও টেস্টিমোনিয়াল দেখে বিভ্রান্ত হবেন না।
আমার সাজেশন হল আপনি কোন প্রতিষ্ঠানে শিখার আগে ইউটিউব থেকে ডিজাইনার বেসিক জেনে নিনকিংবা কোন ডিভিডি কোর্স নিতে পারেন।
প্রিমিয়াম ডিভিডি ইউটিউব থেকে ভালো হবে যেহেতু ডিভিডিতে ভিডিও সিরিজ আকারে থাকে এবং  মূল্যও হাতের নাগালে।
ডিভিডি থেকে আপনি বেসিক থেকে প্রফেশনাল লেভেল পর্যন্ত গাইডলাইন পাবেনপাশাপাশি আপনি  তাদের থেকে যে কোন সময় প্রয়োজনীয় সাপোর্ট অনলাইনে পাবেন।
তবে ইউটিউবে কিছুদিন টাইম দিলেই আপনি বুঝতে পারবেন গ্রাফিক ডিজাইন শিখার জন্যে আপনাকে  কতটা পথ পাড়ি দিতে হবে।

এইটা মাথায় রাখবেনযেই ডিজাইন আপনাকে সম্মান দিবে এবং ভালো আয়ের ক্ষেত্র তৈরি করবে সেটাতে আপনি সময় এবং অর্থ বিনিয়োগ করাটা বিফলে যাবে না।


গ্রাফিক ডিজাইনারদের শিক্ষাগত যোগ্যতা কেমন হতে হয়?

দেশীয় প্রতিষ্ঠানগুলা ডিজাইনার এর পোস্টের জন্য ডিজাইনে ডিপ্লোমা বা ফাইন আর্টসে অনার্স চেয়ে থাকে এবং এইটা  বলা থাকে কাজের যোগ্যতা ভাল হলে শিক্ষাগত যোগ্যতা বেপার না।
আর আন্তর্জাতিক বাজারে কাজের জন্যে প্রাতিষ্ঠানিক লেখা পড়া একেবারেই জরুরি নাএইখানে আপনাকেকাজের যোগ্যতা দিয়ে ক্যারিয়ার গড়তে হবে।
তবে একটিভ আয়ের ক্ষেত্রে আপনার সবচেয়ে বড় যোগ্যতা হচ্ছে ইংলিশে কমিউনিকেশন ভালো পারতে  হবে। তবে পেসিভ আয়ের ক্ষেত্রে বেসিক জানলেই হবে।

লেখার পড়ার বিষয়ে দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক উভয় জব বাজারের জন্যে আমার সাজেশন হচ্ছে আপনাকে মিনিমাম HSC বা সমমান এর যোগ্যতা সম্পন্ন হওয়াই উত্তম।

গ্রাফিক ডিজাইন শিখতে কত দিন লাগে

গ্রাফিক ডিজাইন শেখা বা ক্রিয়েটিভিটি বৃদ্ধির ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট সময় বলা কঠিন।
তবে আপনাকে মিনিমাম ৬ মাস সময় দিতে হবে নিজেকে গ্রাফিক ডিজাইনে স্কিলড করার জন্য।

 গ্রাফিক্স ডিজাইন কি?


আমাদের কে যদি বলা হয় গ্রাফিক্স ডিজাইন কী?
তাহলে হয়তো  আমারা অনেকে বলব Adobe Illustrator and Adobe Photoshop   ব্যবহার করে  ডিজাইন করাকে গ্রাফিক্স ডিজাইন বলে। আমাদের এই ধারণাটি পুরোপুরি সঠিক নয় । শুধু সফটওয়্যার ব্যবহার করার নামই গ্রাফিক্স ডিজাইন না। 

তাহলে  গ্রাফিক ডিজাইন কি?

Delivery a message or any  information using some Graphical Elements.  ( গ্রাফিক্যাল এলিমেন্ট ব্যবহার করে কোন মেসেজ বা তথ্য দেওয়া কেই গ্রাফিক ডিজাইন বলে। )  
আর এ মেসেজ বা ইনফরমেশন  আমরা কাকে দিচ্ছি? অবশ্যই আমাদের টার্গেট করা লোকদের । তাদের সামনে কোন তথ্য বা ইনফরমেশন কে  গ্রাফিক্যাল  এলিমেন্ট দিয়ে সুন্দর ভাবে উপস্থাপন করাকেই গ্রাফিক্স ডিজাইন বলে। 

 বিষটি আমরা  আরো বিস্তারিত জানব। 

 
 Graphic and design  দুটি আলাদা শব্দ । দুটি শব্দের দুটি অর্থ রয়েছে  আর এ দুটি  শব্দের সমন্বয়ে গ্রাফিক ডিজাইন। 

 What is graphic?

কিছু visual element ব্যবহার করে একটি Art  তৈরি ( সফটওয়্যার বা অন্য কোন  মাধ্যমে )   করে কোন মেসেজ বা তথ্য দেওয়া কেই  graphic বলে।



How to create art?   

কিছু Shape, কিছু Text (Typography) , কিছু Color,  কিছু  Image  এবং More...  (Pattern,Background,etc) ব্যবহার করে তৈরি হয়। 


এবার  আমরা ডিজাইন কি সেটা জানি। 


What is design? 

  Design বিষটি ৪ টি ধাপে হয়ে থাকে: 

  1. Your Thinking
  2. Planning
  3. Research 
  4. Problem Solving
1. Your Thinking:   Art তৈরি করার আগে চিন্তা করা, আপনি কি  তৈরি করতে যাচ্ছেন ? বা কেন তৈরি করতে যাচ্ছেন? কাদের জন্য  তৈরি করতে যাচ্ছেন? কিভাবে তৈরি করাতে যাচ্ছেন?  এ সকল কিছু চিন্তা করা। তারপর

2. Planning:  আপনি কি কি মেসেজ / ইনফরমেশন দিব এবং গ্রাহককে কিভাবে আকৃষ্ট করা যায় তা নিয়ে পরিকল্পনা করা। অর্থাৎ যেটা করব সেটা নিয়ে চিন্তাভাবনা করা Art  তৈরীর পূর্বে।  তারপর 

3. Research:  যেটা পরিকল্পনা করেছিলাম সেটা নিয়ে রিসার্চ করা। আর কি কি এড করা যায় বা আর কোথা থেকে তথ্য নেওয়া যায় তা নিয়ে রিসার্চ করা। তারপর

4. Problem Solving : রিসার্চ করার পর যে  সমস্যা দেখা দিবে তার সমাধান করে Art  করা । 

এক কথায়,  যেকোন কিছু  তৈরি করার বা অংকন করার  পূর্বে, যেটা দিয়ে মানুষকে কোনো তথ্য / মেসেজ দেওয়া হবে সেই ইনফরমেশন / মেসেজ টা মানুষের কাছে যাবে কি যাবে না সেটা নিয়ে পূর্ব পরিকল্পনা , রিসার্চ এবং সমস্যার সমাধান করাকে  একসাথে  Design বলে।  এবং এ Design এর পরে কোন কিছু একটা  রেডি হয়ে মানুষের কাছে যাবে যেটা দিয়ে মানুষের কাছে  ইনফরমেশন / মেসেজ পোঁছবে। 

বিষটা আমরা  একটা উদাহরণের মাধ্যমে বুঝব।

উপরের ছবিটি দেখে আমরা বুঝতে পরলাম যে এটি একটি  Restaurant এর  Fast Food Menu যেখানে প্রতিটি আইটেম এর নাম এর পাশে ছবি সহ দেওয়া আছে । একটা বিষয় আমাদের সামনে আসে তা হল প্রতিটি আইটেম এর নাম দেওয়া সত্তেও কেন Image ব্যবহার করা হয়েছে?   এর কারণ হল এখন কেও যদি ডিজাইনটি দেখে এবং সে যদি কোন আইটেম আগে থেকে চিনে কিন্তু তার  নাম আগে থেকে নাও জেনে থাকে তার পরেও ছবিটি দেখে  চিনতে পরবে । কোন বাচ্ছা যদি ডিজাইন টা দেখে এবং সে লিখা দেখে বুঝতে না পারলেও ছবি দেখে  বুঝতে পারবে সে কি খাবে এবং  অর্ডার করতে পারবে।   এই যে উপরের এ  ডিজাইন টি যাতে সব শ্রেণীর মানুষ দেখে সহজে চিনতে পারে এবং ডিজাইন টা দেখতে তাকে কিভাবে বাধ্য করা যা  সে জন্য আগে থেকে পরিকল্পনা করাটাই হল ডিজাইন।