ফ্রিল্যান্সিং এ কাজের বড় একটি মার্কেটের নাম ডাটা এন্ট্রি। কোর্সটিকার ফেসবুক গ্রুপে অনেকেই ডাটা এন্ট্রির ব্যাপারে জানার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। আজ তাদের জন্য এই লেখাটি। ডাটা এন্ট্রি কী, কেন করবেন এবং কীভাবে করবেন এসব নিয়ে আজ আমরা বিস্তারিত আলোচনা করবো। পাশাপাশি পাশাপাশি কোথায় পাবেন ডাটা এন্ট্রি জব তারও সুনির্দিষ্ট কিছু গাইডলাইন বর্ণনা করার চেষ্টা করবো।

১. ডাটা এন্ট্রি কি?

ডাটা এন্ট্রি বা Data Entry হচ্ছে কম্পিউটারের মাধ্যমে একটি নির্দিষ্ট ধরনের ডাটা একটি স্থান থেকে অন্য আরেকটি স্থানে কপি করা। যেমন: Data Entry হতে পারে হাতে লেখা কোন তথ্যকে কম্পিউটারের মাধ্যমে টাইপ করা বা কম্পিউটারের কোন একটি প্রোগ্রামের Data একটি Spreadsheet ফাইলে সংরক্ষণ করা।

মনে করুন, আপনার ক্লায়েন্ট আপনাকে কিছু পিডিএফ বা ইমেজ ফাইল দিল। এবং বললো, এই ফাইলগুলোতে যে টেক্সগুলো আছে, তা একটি ওয়ার্ড ফাইলে হুবহু লিখে তাকে সফট কপি দিতে হবে। এটি একটি ডাটা এন্ট্রির কাজ।

অর্থাৎ বুঝতেই পারছেন, ডাটা এন্ট্রি হচ্ছে ডাটার এক রূপ থেকে অন্য রূপের পরিবর্তন ঘটানো বা অন্য রূপে উপস্থাপন করা।

২. ডাটা এন্ট্রির প্রয়োজন কি?

কম্পিউটার ব্যবহার বৃদ্ধির সাথে সাথে ডাটা এন্ট্রি শব্দটি সবার মাঝে পরিচিত হয়েছে। আমরা জানি বর্তমান ইন্টারনেটের যুগে চলছে তথ্যের অবাধ প্রবাহ। তথ্যের আদান প্রদান যেমন বিস্তৃত হয়েছে, তেমনি বেড়েছে বিভিন্ন ধরনের ডাটাকে সুবিন্যাস্ত করে এর বহুবিধ ব্যবহার করা। আর সেকারণে বর্তমান গ্লোবাল দুনিয়ায় দক্ষ Data Entry অপারেটের ব্যাপক চাহিদাও বেড়েছে।


মজার ব্যাপার হলো, এধরনের কাজগুলো একা বা দলগতভাবে সম্পন্ন করা যায় এবং বেশিরভাগ ক্ষেত্রে কম্পিউটার ও ইন্টারনেটের অল্প জ্ঞান সম্পন্ন মানুষও এ কাজগুলো করতে পারেন। সে জন্য বর্তমানে এটি ঘরে বসে আয়ের অনেকগুলো সহজ পথের মধ্যে একটি অন্যতম সহজ পথ হিসেবে ধরে নেয়া হচ্ছে।

৩. কোথায় পাবেন ডাটা এন্ট্রির কাজ?

আপনি যদি ফ্রিল্যান্সিং করতে বেশ আগ্রহী হয়ে থাকেন, তাহলে ডাটা এন্ট্রির কাজ দিয়েই ফ্রিল্যান্সিং জগতে পা রাখতে পারেন। ডাটা এন্ট্রি এর কাজগুলো সাধারণত ফ্রিল্যান্সিং বা আউটসোর্সিং মার্কেটপ্লেসগুলোতে পাওয়া যায়। ফ্রিল্যান্সার ডট কমওডেস্ক এবং ইল্যান্স এর মত এরকম বেশকিছু মার্কেটপ্লেস আছে, যেখানে আপনি বিনামূল্যে রেজিষ্ট্রেশন করে ডাটা এন্ট্রি কাজ পেতে পারেন।

এ সকল সাইটগুলোতে ডাটা এন্ট্রি কাজের আলাদা বিভাগ রয়েছে। সাইটগুলোতে কয়েকশত ডলার থেকে কয়েক হাজার ডলারের প্রজেক্ট রয়েছে। নির্দিষ্ট একটি কাজের জন্য আপনি নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ এখান থেকে উপার্জন করতে পারেন।

৪. ডাটা এন্ট্রির করতে যে যোগ্যতা লাগবে

ফ্রিল্যান্সিং এ অন্যান্য কাজের মতো ডাটা এন্ট্রি খুব একটা কঠিন কোন কাজ নয়। তাই এটি করার জন্য আপনাকে প্রচণ্ডরকমের যোগ্যতাসম্পন্ন হতে হবে না। তবে আপনি যদি অধিক যোগ্যতাসম্পন্ন হয়ে থাকেন, তাহলে সেটা আপনার জন্যই ভালো। চলুন দেখি এ কাজের জন্য কি কি জানা লাগবে।

► ইন্টারনেটে সার্চ করে কোন একটি তথ্য খোঁজে বের করার মত যোগ্যতা।
► বায়ারের চাহিদা বোঝার মত ন্যূনতম ইংরেজি জ্ঞান।
► মোটামুটি দ্রুত টাইপিং করার ক্ষমতা।
► বিভিন্ন ধরনের ওয়েবসাইট বা ফোরাম ইত্যাদি সম্পর্কে ধারণা।
► মাইক্রোসফট ওয়ার্ড ও মাইক্রোসফট এক্সেলের ওপর অভিজ্ঞতা।

এছাড়া কিছু কিছু প্রজেক্ট পাওয়া যায় যাতে শুধুমাত্র কপি-পেস্ট করা ছাড়া আর কোন দক্ষতার প্রয়োজন হয় না। যেটা শুরুতেই আলোচনা করা হয়েছে।

৫. ডাটা এন্ট্রি কাজের প্রকারভেদ

একজন ফ্রিল্যান্সারকে বিভিন্ন প্রকার ডাটা এন্ট্রি কাজ করতে হয় এবং এ সম্পর্কে সম্মুখ ধারণা রাখতে হয়। যেমন:
► ওয়েবসাইটের জন্য একটি নির্দিষ্ট বিষয়ের উপর আর্টিকেল লেখা।
► বিভিন্ন ওয়েবসাইটে ফাইল ও ছবি ইত্যাদি আপলোড করা।
► দুটি ওয়েবসাইটের মধ্যে Link Exchange করা।
► বিভিন্ন সাইট থেকে নির্দিষ্ট কিছু তথ্য এক্সেলের একটি ফাইলে সংরক্ষণ করা।
► পিডিএফ এর লেখার ফরমেট, ছবি, ফুটনোট ইত্যাদি অপরিবর্তিতভাবে মাইক্রোসফট ওয়ার্ডে কপি করা।
► একটি ওয়েবসাইটকে বিভিন্ন ওয়েবসাইট, ফোরাম, গ্রুপে গিয়ে পরিচয় করিয়ে দেয়া।
► অনলাইনে বিভিন্ন পণ্য বিক্রি করতে সাহায্য করা।
► ই-কমার্স ওয়েবসাইটে প্রোডাক্ট আপলোড করা।
► অপটিক্যাল কারেক্টার রিকগনিশন (OCR ) থেকে প্রাপ্ত লেখার ভুল সংশোধন করা।

সবশেষে, Data Entry কাজের রয়েছে অপার সম্ভাবনা। প্রথমদিকে একটু ধৈর্য্য সহকারে কাজ করতে থাকলে এ কাজের স্বপ্ন ও সম্ভাবনা দুটোই হাতের নাগালে চলে আসবে। কাজ বাছাই করার ক্ষেত্রে একটু বুদ্ধিমত্ত্বার পরিচয় দিন। বিশেষ করে যেসব ক্লায়েন্টের কাছ থেকে ভবিষ্যতে আরও বড় বড় প্রজেক্ট পাবার সম্ভাবনা রয়েছে, সে সব প্রজেক্ট গুলো পাবার চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে।