দক্ষ লোগো ডিজাইনার হিসেবে ক্যারিয়ার শুরু করতে চান? পড়ুন এই লেখাটি

Logo Design for beginners- basic concept to start

আমরা ব্র্যান্ডিংয়ের যুগে বসবাস করছি। আর ব্র্যান্ডিংয়ের ক্ষেত্রে লোগোর প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য। লোগো সাথে আমাদের প্রত্যেকেই কোনো না কোনোভাবে কমবেশি পরিচিত। আমাদের মাঝে হয়তো এমন অনেকেই রয়েছেন যারা এই জিনিসটির নাম সম্পর্কে সেভাবে অবগত নন, কিন্তু চোখের দেখায় ঠিকই চেনেন বা লোগো ব্যবহার সম্পর্কে ধারণা রাখেন; আবার এমন অনেকেই আছেন যারা এই জিনিসটিকে ভিন্ন কোনো নামে চেনেন, যেমনট্রেডমার্ক, হলমার্ক, মনোগ্রাম প্রভৃতি।

ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষের দিকে প্রথমবারের মত  বাণিজ্যিকভাবে লোগো ডিজাইন এর ব্যবহার শুরু হয়, যা বর্তমান শতাব্দীতে এসে কয়েক গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। একবিংশ শতকের বিভিন্ন বাণিজ্যিক বা অবাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান, সংগঠন, গোষ্ঠী বা সংস্থাকে নিজেদের পরিচয়ের স্মারকচিহ্ন হিসাবে নির্দিষ্ট কিছু প্রতীকের ব্যবহার করতে দেখা যায়। আর এই চিহ্নই আমাদের কাছে লোগো নামে সর্বাধিক পরিচিত। জুতোর কোম্পানি থেকে শুরু করে রকেট নির্মানকারী প্রতিষ্ঠানপ্রত্যেকেরই রয়েছে নিজ নিজ পরিচয়ের ধারকবাহক চিহ্ন বা প্রতীক। সুতরাং, লোগো হলো কোনো একটি প্রতিষ্ঠান, সংস্থা, বা সংগঠনের আইডেন্টিটি সিম্বল বা পরিচায়ক চিহ্ন। ক্ষুদ্র আকৃতির এই চিহ্নের গুরুত্ব বর্তমানে কেবলমাত্র একটি প্রতিষ্ঠানের পরিচায়ক হিসাবেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং এটি আরও অনেক ব্যাপারে তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। সুন্দর ডিজাইনের একটি লোগো গ্রাহকদের আকৃষ্ট করার সাথে সাথে তাদের নিকট পণ্য বা সেবার গ্রহণযোগ্যতাকে আরও বাড়িয়ে তুলে। পাশাপাশি প্রতিষ্ঠানের সুনাম বৃদ্ধিতেও রেখে থাকে কার্যকরী অবদান। লোগো ভূমিকা রয়েছে পণ্য বা সেবার মার্কেটিং বা বাজারজাতকরণেও।

লোগো নিয়ে আমাদের মনে বিভিন্ন জিজ্ঞাসার জন্ম নেয়। চলুন সেই জিজ্ঞাসাগুলো সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক।

Contents:

লোগো কি?

লোগো ইতিহাস

লোগো কেন প্রয়োজন?

লোগো কত প্রকার?

লোগো ডিজাইন কীভাবে করাবেন?

লোগো নির্বাচন করার সময় যে বিষয়গুলো মাথায় রাখবেন

লোগো ডিজাইন করতে গিয়ে যে ভুলগুলো আমরা করে থাকি

লোগো তৈরিতে যে সফটওয়্যারগুলো ব্যবহার করা যেতে পারে

কীভাবে লোগো কপিরাইট নিবন্ধন করাবেন

বাংলাহাব প্রশ্ন-উত্তর ভিত্তিক কমিউনিটি ওয়েবসাইট বাংলাহাব Answers থেকে পাঠকের কিছু প্রশ্ন তার উত্তর। আপনিও ভিজিট করুন প্রশ্ন-উত্তর দিন।


বিশ্ববিখ্যাত কয়েকটি ব্র্যান্ডের লোগো

লোগো কি?

চলুন শুরুতেই জেনে নিই, লোগো কাকে বলে? ইংরেজি লোগো (Logo) শব্দটি লোগোটাইপ (logotype) বা লোগোগ্রাম (logogram) শব্দের সংক্ষিপ্তরূপ, যার আক্ষরিক অর্থ প্রতীক বা চিহ্ন। সাধারণত কোনো কোম্পানি, প্রতিষ্ঠান, সংস্থা, সংগঠন, পণ্য বা ব্র্যান্ডকে তার গ্রাহকরা যাতে করে সহজেই সনাক্ত করতে পারে বা চিনতে পারে, সেজন্য যে গ্রাফিক মার্ক, চিহ্ন, প্রতীক বা স্টাইলাইজড নাম ব্যবহার করা হয়, তাকে লোগো বলে।

অন্যভাবে বলা যায়লোগো হলো আপনার ব্র্যান্ড আইডেন্টিটির ভিজ্যুয়াল প্রতিরূপ, যার মাধ্যমে আপনি মানুষের কাছে যে বার্তাটি পৌঁছে দিতে চাচ্ছেন সেটি তাৎক্ষণিকভাবে পৌঁছে দেয় এবং একটু একটু করে তাদের মনের ভেতরে আপনার প্রেরিত বার্তাটির প্রতি বিশ্বাসের জন্ম দেয়। এতে করে গ্রাহকরা যখনই আপনার প্রতিষ্ঠান, ব্র্যান্ড, পণ্য বা সেবা সম্পর্কে ভাববে, তখন তাদের মনে বিভিন্ন ভাবনারা এসে ভিড় করবে। এই ভাবনাগুলোর অধিকাংশ সম্পূর্ণ অবচেতনভাবেই গ্রাহকদের মনে এসে ভিড় করে একটি ভালো লোগো গুণেই। আর এই বিষয়টি মাথায় রেখেই কোনো প্রতিষ্ঠান, সংস্থা, বা পণ্যের জন্য গ্রাফিক চিহ্ন, প্রতীক বা স্টাইলাইজড নাম ডিজাইন হয়।

*লোগো ইতিহাস

কোনো ব্র্যান্ড বা প্রতিষ্ঠানের জন্য একটি লোগো হয়ে উঠতে পারে খুবই শক্তিশালী সম্পদ। সত্যি বলতে এমন অনেক প্রতিষ্ঠান বা ব্র্যান্ড রয়েছে যাদেরকে আমরা নাম অপেক্ষা লোগো মাধ্যমেই সবচেয়ে দ্রুত চিহ্নিত করতে পারি।


প্রাচীন গ্রিসে ইস্যুকৃত শাসকের চেহারা খোদাইকৃত মুদ্রা : লোগোর আদি নিদর্শন

লোগো সুস্পষ্ট ইতিহাস মেলা ভার। তবে কেউ কেউ প্রাচীন গ্রিসে ইস্যুকৃত মুদ্রায় শাসকদের খোদাই করে দেওয়া চিহ্নগুলোকে লোগো আদি নিদর্শন হিসাবে দাবী করে থাকেন। যদিও কেউ আবার আরও আদিতে ফিরে যেতে চান লোগো উৎসের সন্ধান দিতে। এই দলটি লোগো আদি নিদর্শন হিসাবে প্রাচীন মিশরে প্রচলিত লেখন পদ্ধতির কথা উল্লেখ করেন। হায়রোগ্লিফিক নামে পরিচিত এই পদ্ধতিতে লেখার জন্য সেই সময় বিভিন্ন চিহ্ন বা প্রতীকের ব্যবহার করা হতো। সেই সময় মিশরিয়রা তাদের সম্পত্তি চিহ্নিত সনাক্তকরণের ক্ষেত্রে অনুসরণ করতো এটি। অবশ্য আধুনিক লোগো নিদর্শন খুঁজে পাওয়া যায় ত্রয়োদশ শতকে এবং রেনেসাঁ সময়কালে। সেই সময় মৃৎশিল্পী, পাথর খোদাই করে ভাস্কর্যসহ বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণের সাথে যুক্ত ব্যক্তি এবং স্যাকরারা তাদের কাজগুলোতে ছেনি দিয়ে বিভিন্ন চিহ্ন খোদাই করে রাখতো মালিকানার নিদর্শন হিসাবে।


হায়রোগ্লিফিক্স : লোগোর আদি নিদর্শন বলে মনে করা হয় যাকে

যদিও বাণিজ্যিকভাবে লোগো প্রথম ব্যবহার শুরু হয় ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষের দিকে। ভিক্টোরিয়ান যুগে বিভিন্ন পণ্যের চাহিদা বৃদ্ধি পায়। এতে করে পণ্য উৎপাদণের পরিমাণও বাড়তে থাকে ব্যাপক হারে। ফলাফল, প্রতিদ্বন্দ্বী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে প্রতিযোগীতায় টিকে থাকতে কোম্পানিগুলো তাদের উৎপাদিত পণ্যের গুণগত মান শিল্পনৈপুণ্য বৃদ্ধি তা ধরে রাখার দিকে মনোনিবেশ করতে থাকে। প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে সেই সময় নিজেদের উৎপাদিত পণ্যমানের কৃতিত্ব গ্রহণের ব্যাপারেও সচেতনতা দেখা যায়। সেই ধারাবাহিকতায় প্রথমবারের মতো সমজাতীয় পণ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের প্রতিষ্ঠান বা উৎপাদিত পণ্যের জন্য স্বতন্ত্র পরিচায়ক হিসাবে বিমূর্ত প্রতীক ব্যবহারের প্রয়োজনীয়তা অনুধাবন করে।


বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহৃত প্রথম লোগো।

১৮৭৬ সালে, বাস ব্রুওয়ারি নামের একটি প্রতিষ্ঠান প্রথমবারের মতো বাণিজ্যিকভাবে নিজেদের ট্রেডমার্ক বা লোগো উন্মুক্ত করেন। তাদের লোগোটি ছিল একটি লাল রঙের ত্রিভুজ, যার নিচে ইংরেজিতে লেখা ছিল BASS কথাটি। লোগোটি ডিজাইনের ক্ষেত্রে ১৮৮০ সালে জোহান ওলফগ্যাং ফন গ্যোথের দেওয়া বর্ণ তত্ত্ব অনুসরণ করা হয়েছিল, যেখানে লাল রঙকে উপস্থাপন করা হয়েছিল ভাবগাম্ভীর্য মর্যাদাপূর্ণ অবস্থানের প্রতীক হিসাবে।

লোগো কেন প্রয়োজন?

ধরে নেই, শীঘ্রই আপনি একটি ব্যবসা শুরু করতে চলেছেন। এক্ষেত্রে ব্যবসায়ের সাথে সম্পর্কিত অন্যান্য বিষয়গুলো গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করলেও লোগো তৈরির বিষয়টিকে সেভাবে অগ্রাধিকার দিলেন না। কোনো কারণে লোগো বিষয়টি মাথায় চলে আসলেও, এটা ভেবে ব্যাপারটাকে ঝেটিয়ে বিদায় করে দিলেন যে, এই মুহূর্তে আমার কোনো লোগো দরকার কেন হবে। নিঃসন্দেহে এটা একটা ভুল ধারণা। প্রতিষ্ঠানের সাফল্যের সাথে একটি সুন্দর ডিজাইনের লোগো গুরুত্ব কোনো অংশেই কম নয়। গ্রাহকদের মনোযোগ আকর্ষণ, প্রথম দর্শনেই প্রতিষ্ঠান বা ব্র্যান্ড সম্পর্কে শক্তিশালী ধারণার জন্ম দেওয়া, পরিচয়ের ভিত্তি, স্মরণ করিয়ে দিতে সহায়তা করা, প্রতিযোগী প্রতিষ্ঠান থেকে ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গীর জন্ম দেওয়া, ব্র্যান্ড লয়ালটি রক্ষার মতো কাজ করে থাকে। তাছাড়া গ্রাহকদের কাছে তাদের পছন্দের প্রতিষ্ঠানের সুন্দর একটি লোগো থাকা খুবই প্রত্যাশিত ব্যাপার।

  • মনোযোগ আকর্ষণ : বাংলায় একটি প্রবাদ রয়েছে, আগে দর্শনধারী, পরে গুণবিচারি যেকোনো জিনিস প্রথমে আমরা চর্মচক্ষু দিয়ে বিচার করি। অর্থাৎ, চোখের দেখায় আকর্ষণীয় বলে মনে হলেই আমরা সেই জিনিসটার প্রতি আকর্ষণ বোধ করি। এভাবেই কোনো কিছুর প্রতি আমাদের আগ্রহের সূচনা। একটি সুন্দর লোগো অতি সহজেই একজন মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণের কাজটি করার পাশাপাশি সেই প্রতিষ্ঠানের প্রতি আগ্রহের জন্ম দিয়ে থাকে।
  • পরিচয়ের ভিত্তি : প্রতিষ্ঠানের আইডেন্টিটি তথা পরিচয়ের মাধ্যম হিসাবে লোগো বেশ কার্যকরী। প্রতিষ্ঠানের বিজনেস কার্ড, লেটারহেড, ল্যান্ডিং পেজসহ ব্র্যান্ডিংয়ের কাজে ব্যবহৃত হয় এমন সব ধরনের ম্যাটেরিয়ালে লোগো পরিচায়ক হিসাবে সহজেই ব্যবহার করা যায়। এতে করে সৌন্দর্য বর্ধনের পাশাপাশি প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে গ্রাহক বা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের মধ্যে ইতিবাচক ইম্প্রেশন জন্মায়।
  • প্রথম দর্শনে শক্তিশালী ধারণা তৈরি : যেহেতু একজন কাস্টোমারের সাথে কোনো প্রতিষ্ঠানের প্রথম পরিচয় হয় লোগো মাধ্যমে, তাই যেকোনো প্রতিষ্ঠানেরই উচিত একটি সুন্দর ডিজাইনের লোগো বানিয়ে নেওয়া। পরিচয় প্রদানের পাশাপাশি একটি লোগো অভিনব উপায়ে কোনো প্রতিষ্ঠানের কোর ভ্যালু সম্পর্কেও তার গ্রাহকদের ধারণা দিয়ে থাকে। সুন্দর ডিজাইনের লোগো প্রথম দর্শনেই গ্রাহকদের মধ্যে আপনার প্রতিষ্ঠানের সম্পর্কে শক্তিশালী ধারণার জন্ম দেবে, যা তাদেরকে প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে আরও ভালোভাবে জানতে উৎসাহ প্রদান করে থাকে।
  • মনে রাখতে সহায়তা করা : সুন্দর ডিজাইনের দৃষ্টিনন্দন লোগো মানুষের মনেও থাকে অনেক সময় ধরে। অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায়, আমরা কোনো প্রতিষ্ঠানের নাম মনে রাখতে না পারলেও বা ভুলে গেলেও প্রতিষ্ঠানের লোগো কথা ঠিকই আমাদের স্মৃতিতে সংরক্ষিত অবস্থায় রয়ে যায়। এতে করে লোগো দেখার সাথে সাথে প্রতিষ্ঠানের নামটিও আমাদের মনে পড়ে যায়। অর্থাৎ, কাস্টমাররা যাতে করে সহজেই কোনো প্রতিষ্ঠানের নাম মনে রাখতে পারে, একটি লোগো সেই কাজটিও করে থাকে।
  • প্রতিদ্বন্দ্বী প্রতিষ্ঠান থেকে নিজের প্রতিষ্ঠানকে ভিন্নভাবে উপস্থাপন : প্রতিদ্বন্দ্বী প্রতিষ্ঠান থেকে আপনার প্রতিষ্ঠানকে ভিন্নভাবে উপস্থাপন করার মধ্য দিয়ে আলাদা ইমেজ তৈরি করার ক্ষেত্রে লোগো খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ভালো মানের পণ্যই কেবলমাত্র ক্রেতা বা গ্রাহকদের আকৃষ্ট করে এমনটা নয়। দৃষ্টিনন্দন লোগোও অনেক সময় আপনার প্রতিষ্ঠানের সুনামের সাথে যোগ করে বাড়তি মাত্রা।
  • ব্র্যান্ড লয়ালটি : ব্যবসায়ের ক্ষেত্রে ব্র্যান্ড লয়ালটি খুবই জরুরী বিষয়। আপনার প্রতিষ্ঠানের পরিধি যত বাড়তে থাকবে, তার সাথে পাল্লা দিয়ে গ্রাহকদের মধ্যে প্রতিষ্ঠানের লোগো পরিচিতিও বাড়তে থাকে। এভাবে এক সময় আস্থার অপর নাম হয়ে উঠবে আপনার ব্যবহৃত এই লোগোটি। আর তখন পণ্যের সাথে থাকা লোগোটি দেখেই গ্রাহকরা সেটা চোখ বুঝেই সংগ্রহ করবে। যেমন ধরুন, জুতো কিনতে গিয়ে যখন সেটির গায়ে অ্যাডিডাস বা নাইকি লোগো দেখতে পান, তখন আপনার ভেতরকার অনুভূতি কেমন হয়? কিংবা বাটা-অ্যাপেক্সের লোগো? বা অ্যাপলের আইফোন, কম্পিউটার বা অন্য যেকোনো এক্সেসরিজে থাকা লোগোটি? নিজেই অনুধাবন করা চেষ্টা করুন। নিশ্চয় ভালো? ঠিক তাই।

 লোগো কত প্রকার?

ডিজাইনের ধরনের ভিন্নতার ভিত্তিতে লোগো প্রধানত সাত রকমের হয়ে থাকে। প্রতিটা লোগোই আলাদা আলাদা বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন। ব্যবহারের ক্ষেত্রেও রয়েছে ভিন্ন ভিন্ন উপযোগীতা। ব্যবসায়ের ধরনের ভিত্তিতে ভিন্ন ভিন্ন ধরনের লোগো ব্যবহার করা হয়। সাত রকমের লোগো সম্পর্কে সংক্ষেপে খানিকটা জেনে নেওয়া যাক :

  • লেটারমার্ক বা মনোগ্রাম লোগো :  ধরনের লোগো তৈরিতে ব্র্যান্ডের নামের সংক্ষিপ্তরূপ ব্যবহার করা হয়। এক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের মূল নামটি সরাসরি ব্যবহার না করে বরং নামের একটি, দুটি বা তিনটি বর্ণকে সংক্ষিপ্তরূপ হিসাবে লোগোতে ব্যবহার করে। উদাহরণ হিসাবে এইচপি, সিএনএন, এইচবিও, নাসা সহ বিশ্বের কিছু নামকরা প্রতিষ্ঠানের কথা উল্লেখ করা যেতে পারে। লক্ষ করলে দেখা যায়, এই প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের পুরো নাম ব্যবহার না করে নামের দুটো, তিনটে বা চারটে অক্ষর ব্যবহার করেছে লোগো হিসাবে। যেসব প্রতিষ্ঠানগুলোর নাম তুলনামূলকভাবে একটু বেশিই বড়ো হয়, সেসব প্রতিষ্ঠান ধরনের লোগো ব্যবহার করতে পারে। এতে করে নামটা মনে রাখতেও সহজ হয়। যেমন : এইচবিও বা নাসা এইচবিও পুরো নাম হোম বক্স অফিস আবার নাসা পুরো নাম ন্যাশনাল অ্যারোনটিকস অ্যান্ড স্পেস কিন্তু এইচবিও বা নাসা নাম দুটি বেশ সহজমুখে বলতেও এবং মনে রাখতেও। আর কারণেই প্রকৃত নামের চেয়ে লোগোতে ব্যবহৃত নামের সংক্ষিপ্ত আকারটিই সবচেয়ে বেশি পরিচিত। তবে নতুন প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে ধরনের লোগো ব্যবহার না করাই ভালো। অবশ্য যদি আপনার একান্তই পছন্দের হয়, তবে সেক্ষেত্রে লোগোর নিচে ছোটো করে প্রতিষ্ঠানের নামটিও যুক্ত করে দেওয়া যেতে পারে।


লেটারমার্ক বা মনোগ্রাম লোগো

  • ওয়ার্ডমার্ক বা লোগোটাইপ : এই লোগোগুলো অনেকাংশেই লেটারমার্ক লোগোর মতো। তবে সামান্য পার্থক্য রয়েছে। ওয়ার্ডমার্ক বা লোগোটাইপ ঘরানার লোগোগুলোতে প্রকৃত নামের সংক্ষিপ্তকরণের বদলে পুরো নামটাই ব্যবহার করা হয়। ইয়াহু, কোকাকোলা, সনি মতো পৃথিবীর অনেক বড়ো বড়ো প্রতিষ্ঠানকে ধরনের লোগো ব্যবহার করতে দেখে থাকি আমরা। তবে ওয়ার্ডমার্ক ঘরানার লোগোগুলো সাধারণত সেসব প্রতিষ্ঠানের জন্যই উপযুক্ত, যাদের নাম আকারে ছোটো আকর্ষণীয়। তবে বড়ো নামধারী প্রতিষ্ঠানের জন্য ওয়ার্ডমার্ক বা লোগোটাইপ ঘরানার লোগো না ব্যবহার করাই ভালো।


ওয়ার্ডমার্ক বা লোগোটাইপ

  • মাসকট লোগো : মাসকট লোগোতে কোনো ধরনের প্রতীকের ব্যবহার হয় না। এই লোগো বরং ইলাস্ট্রেশনভিত্তিক হয়ে থাকে, যেখানে রঙচঙে কার্টুনিশ চরিত্র মজার করে উপস্থাপন করতে দেখা যায়। এগুলো বেশ প্রাণবন্তও হয়ে থাকে। আপনি আপনার ব্র্যান্ডকে অনন্যরূপে উপস্থান করতে চাইলে মাসকট লোগো বিকল্প হয় না। লোগোতে ব্যবহৃত মাসকটটি আপনার ব্র্যান্ডের জন্য পণ্যদূত হিসাবে কাজ করে। খাবার নিয়ে কাজ করে এমন প্রতিষ্ঠান, সেবাপ্রদানকারী প্রতিষ্ঠান, ক্রিড়া সংগঠনের জন্য লোগোগুলো সর্বাধিক উপযোগী। এই ব্র্যান্ডমার্কের ব্যবহার আপনার প্রতিষ্ঠানকে গ্রাহকদের কাছে বন্ধুভাবাপন্ন হিসাবে তুলে ধরে। মাসকট লোগো সবচেয়ে পরিচিত উদাহরণ হতে পারে কেএফসি।


মাসকট লোগো
  • লোগো সিম্বল : এটি হলো সবচেয়ে জনপ্রিয় ঘরানার লোগো। ধরনের লোগোগুলোর ভিত্তি সাধারণত গ্রাফিক বা আইকন। এই লোগোগুলোর ক্ষেত্রে এমন সব প্রতীকের ব্যবহার করা হয় যা সহজেই সনাক্ত করা যায়। লোগো সিম্বল ঘরানাটি লোগোর মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় হলেও লোগোটি তৈরির ক্ষেত্রে সবচেয়ে চ্যালেঞ্জিং কাজটি হলো প্রতীক হিসাবে ব্যবহার করার জন্য উপযুক্ত ছবি পছন্দ করা। এক্ষেত্রে লোগো হিসাবে ব্যবহার করার জন্য আপনাকে এমন একটি প্রতীক বেছে নিতে হবে যার সাথে আপনার প্রতিষ্ঠানের নাম চলসই। টিউটর অ্যাপল যার সর্বোৎকৃষ্ট উদাহরণ।


লোগো সিম্বল : অ্যাপল লোগো
  • অ্যাবস্ট্রাক্ট লোগো : অ্যাবস্ট্রাক্ট লোগো সাধারণত ছবিভিত্তিক হয়ে থাকে, যেখানে আপনার ব্যবসায়ের গুণাগুণগুলো প্রতীকের সাহায্যে উপস্থাপন করা হয় বিভিন্ন জ্যামিতিক বিন্যাস ব্যবহার করার মধ্য দিয়ে। ধরনের লোগো ব্যবহার করে এমন প্রতিষ্ঠানগুলোর সর্বোৎকৃষ্ট উদাহরণ হলোঅ্যাডিডাস পেপসি। প্রতিটি লোগো ডিজাইনের মতোই অ্যাবস্ট্রাক্ট লোগোও আপনার ব্যবসায়কে উপস্থাপনের কাজটি করে থাকে, তবে তা কেবল একটি চিত্রের মাধ্যমেই। ব্যবহৃত এই চিত্রটি কোনো একক চিত্র নয়, বরং তার বদলে এক্ষেত্রে কাস্টোম চিত্র ব্যবহার করা হয়ে থাকে। অ্যাবস্ট্রাক্ট লোগো সবচেয়ে ভালো ব্যাপারটি হলোএর মাধ্যমে প্রতীকের সাহায্যে আপনি আপনার ব্র্যান্ডের উদ্দেশ্য তুলে ধরতে এবং আপনার গ্রাহকদেরকে খুব সহজেই গুরুগম্ভীর বার্তা প্রদান করতে পারেন, যা কিনা সত্যিকারার্থে আপনার প্রতিষ্ঠানকে পৌঁছে দিতে পারে অনন্য অবস্থানে। ব্যবহৃত রঙ অন্যান্য উপাদানের সাহায্যে লোগোটির জন্য আপনি এমন একটি স্বতন্ত্র অর্থ তৈরি করে নিতে পারেন যা আপনার ব্র্যান্ডের সাথে ওতপ্রোতভাবে সম্পর্কিত।

অ্যাবস্ট্রাক্ট লোগো
  • এমব্লেম লোগো : যদিও এই লোগোগুলো অনেক বেশি প্রাচীনপন্থী, তবে কথা সত্য যে, এর চাহিদা এখনো কমে যায়নি। মধ্যযুগীয় ধারার এই লোগোগুলো এখনো ব্যবহার করে আসছে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। এমব্লেম লোগোতে মূলত ক্রেস্ট, সিলমোহর নিশান সহ চিহ্ন ব্যবহার করা হয়ে থাকে। বিভিন্ন সংগঠন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সরকারি সংস্থার ব্রান্ডলোগো হিসাবে এমব্লেম প্রথম পছন্দ।


এমব্লেম লোগো

  • কম্বিনেশন মার্ক : ব্যান্ডিংয়ের জগতে আপনাকে কেবলমাত্র কোনো এক রকমের বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন লোগো ব্যবহার করতে হবে এমন কোনো বাঁধাধরা নিয়ম নেই। বরং আপনি চাইলে নিজের প্রতিষ্ঠানের জন্য কয়েক রকম লোগো সমন্বয়ে একটা লোগো প্রস্তুত করে নিতে পারেন। কম্বিনেশন মার্ক লোগো উদাহরণ হলো বিখ্যাত ব্র্যান্ডবার্গার কিং যে লোগোটি ব্যবহার করে সেটি।


কম্বিনেশন মার্ক

এই সাত রকমের লোগোর বাইরেওলেটারফর্ম লোগো, স্লাইম লোগো ফন্ট ইনসাইড শেপ’—এই তিন রকমের লোগো ডিজাইন আমরা দেখতে পাই।

লোগো ডিজাইন কীভাবে করাবেন?

আপনার প্রতিষ্ঠানের জন্য একটা সুন্দর লোগো প্রয়োজন? ভাবছেন, কীভাবে একটা সুন্দর লোগো বানানো যায় বা লোগো ডিজাইন করাবেন?

একটা সুন্দর প্রতিষ্ঠানের জন্য যুতসই লোগো ডিজাইন করার ক্ষেত্রে লোগো সম্পর্কে প্রাথমিক ধারণাযেমন : লোগো কত প্রকার, কোন লোগোর উপযোগীতা কী, কোন ধরনের লোগো কোন প্রতিষ্ঠানের জন্য ব্যবহার করা উচিতথাকা ভালো। এতে করে নিজের প্রতিষ্ঠানের জন্য কোন ধরনের লোগো উপযুক্ত হবে তা নির্বাচন করা আপনার জন্য সহজ হবে।

আর একটি কথা না বললেই নয়, লোগো বানাতে আমাদেরকে অবশ্যই পেশাদার লোগো ডিজাইনারের দ্বারস্থ হওয়া উচিত। যদিও আমাদের অধিকাংশই অপেশাদার ডিজাইনারদের স্মরণাপন্ন হই খরচ কমানোর জন্য। মনে রাখবেন, একটি সুন্দর লোগো সাথে আপনার প্রতিষ্ঠানের ভাবমূর্তি যেমন জড়িত, পাশাপাশি এটি আপনার প্রতিষ্ঠানের জন্য একটি মূল্যবান সম্পদও। তাই লোগো তৈরির ক্ষেত্রে পেশাদার ডিজাইনারের শরণাপন্ন হওয়াই সর্বোত্তম।

লোগো নির্বাচন করার সময় যে বিষয়গুলো মাথায় রাখবেন

লোগো বানাতে আমাদেরকে অবশ্যই প্রফেশনাল ডিজাইনারের দ্বারস্থ হওয়া উচিত। তবে প্রতিষ্ঠানের জন্য উপযুক্ত লোগো নির্বাচন করাটাও জরুরী। লোগো নির্বাচন করার সময় কিছু বিষয় মাথায় রেখেই কাজটা করতে হয়। যে বিষয়গুলো মাথায় রাখতে হবে :

  • প্রথমেই ঠিক করে নিন লোগোর মাধ্যমে গ্রাহকদের কাছে আপনি কোন বার্তা বা মেসেজটি পৌঁছাতে চাচ্ছেন। এতে করে লোগো তৈরির সময় কোন বিষয়টির ওপর ফোকাস করতে হবে সেটি সহজেই বের করে নিতে পারবেন। লোগো নির্বাচনের সময় তা মিলিয়ে নিন।
  • লোগো নির্বাচনে সবসময় সিম্পল লোগোকে প্রাধান্য দিন। অনেক বেশিকিছু ফোকাস করে লোগো তৈরি করতে গেলে তা দৃষ্টিকটু হয়ে উঠতে পারে।
  • লোগো নির্বাচনের সময় এমন একটি আইডিয়াকে ভিত্তি করতে হবে যেন তা কোনো একটি নির্দিষ্ট সময় কেন্দ্রিক না হয়। এক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানের দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনার বিষয়টিও বিবেচনায় রাখতে হবে, যাতে ভবিষ্যতে প্রতিষ্ঠানের লোগো পরিবর্তনের প্রয়োজন না হয়। কেননা বার বার লোগো পরিবর্তন করাটা আপনার প্রতিষ্ঠানের জন্য নেতিবাচক হতে পারে। তাই এমন একটি লোগো নির্বাচন করতে হবে যা সময়ের সাথে সাথে খাপ খাইয়ে নিতে পারে।
  • রঙের সাথে মানুষের মনস্তাত্ত্বিক সম্পর্ক রয়েছে। মানুষের মনে বিভিন্ন মনোভাব তৈরি করে। তাই লোগোতে ব্যবহৃত রঙের বিষয়টাও খেয়াল রাখতে হবে। সেজন্য প্রয়োজনে রঙ সম্পর্কে পড়াশুনাও করে নিতে হবে।
  • প্রতিযোগী প্রতিষ্ঠান সম্পর্কেও জ্ঞান থাকা জরুরী। এতে করে উভয় প্রতিষ্ঠানের লোগো এক হয়ে যাওয়ার সম্ভবনা কমে যাবে। আপনার উদ্দেশ্য হবে এমন একটি লোগো নির্বাচন করা যেটা অন্যদের চেয়ে একেবারেই ভিন্ন হবে।
  • প্রতিষ্ঠানের টার্গেট কাস্টমারদের ব্যাপারটিও বিবেচনায় রাখতে হবে। তাদের কথা মাথায় রেখে লোগো নির্বাচন করা হলে টার্গেট কাস্টমারদের দৃষ্টি আকর্ষণ করা সহজ হবে।

লোগো ডিজাইন করতে গিয়ে যে ভুলগুলো আমরা করে থাকি

লোগো ডিজাইনের ক্ষেত্রে আমরা প্রায়শ যে ভুলগুলো করে থাকি :তা জানা দরকার। কারণ, লোগো মার্কেটিং একে অন্যের সাথে জড়িত। লোগো ভাল না হলে তা আপনার মার্কেটিং এর ওপর প্রভাব ফেলবে।

  • অপেশাদার ডিজাইনারকে দিয়ে লোগো ডিজাইন করা : একজন নতুন ব্যবসায়ী বিভিন্ন খাতে অনেক অর্থ বিনিয়োগ করলেও দেখা যায় লোগো ডিজাইনের ক্ষেত্রে অধিকাংশকেই অপেশাদার ডিজাইনারদের স্মরণাপন্ন হতে দেখা যায় খরচ কমানোর উদ্দেশ্যে। মনে রাখবেন, একটি সুন্দর লোগো সাথে আপনার প্রতিষ্ঠানের ভাবমূর্তি যেমন জড়িত, পাশাপাশি এটি আপনার প্রতিষ্ঠানের জন্য একটি মূল্যবান সম্পদও। তাই লোগো তৈরির ক্ষেত্রে অপেশাদার ডিজাইনারের স্মরণাপন্ন হওয়া যাবে না। বরং পেশাদার কাউকে বেছে নেওয়াই উত্তম। কেননা একজন পেশাদার ডিজাইনারই পারে আপনার প্রতিষ্ঠানের জন্য অসাধারণ একটি লোগো উপহার দিতে।
  • স্রোতে গা ভাসা্নো : লোগো ডিজাইনের সময় অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় স্রোতে গা ভাসাতে দেখা যায়। দ্রুত ফোকাস পেতে চলতি ট্রেন্ডকে প্রাধান্য দেওয়ার প্রবণতা আমাদের মধ্যে রয়েছে। এটা একেবারেই করা উচিত নয়। মনে রাখবেন কোনো ট্রেন্ডই দীর্ঘস্থায়ি নয়। ট্রেন্ড আসে আবার দ্রুতই চলে যায়। আর ট্রেন্ড অনুসরণ করে বানানো যেকোনো কিছু ট্রেন্ড চলে যাওয়ার পর সস্তা হয়ে যায়। আর তাই লোগো ডিজাইনের করতে গিয়ে চলতি ট্রেন্ডকে প্রাধান্য দেওয়া যাবে না।
  • রাস্টার গ্রাফিক ব্যবহার করা : আরও যে ভুলটি লোগো ডিজাইনিংয়ের ক্ষেত্রে করা হয়, সেটি হলো রাস্টার গ্রাফিকের ব্যবহার। এটা একেবারেই অপেশাদার আচরণ। রাস্টার গ্রাফিক ব্যবহার করা একেবারেই উচিত নয়। কারণ রাস্টার গ্রাফিক এক্ষেত্রে লোগোর পিক্সেল কমে যায়। এতে করে প্রয়োজন অনুযায়ী লোগো রিসাইজ করতে গেলে লোগো ঘোলা হয়ে যাওয়ার মতো সমস্যায় পড়তে হবে। এজন্য ভেক্টর গ্রাফিক সফটওয়্যার ব্যবহার করতে হয়।
  • বেশি জটিল করে ফেলা : লোগো ডিজাইন করতে গিয়ে বেশি জটিল করে ফেলতেও দেখা যায় অনেক সময়। অনেকেই মনে করেন লোগো মধ্যে অনেক কিছুর সমাবেশ ঘটাতে পারলেই বুঝি ইউনিক কিছু করে ফেলা যাবে। এটা একেবারেই ভুল ধারণা। অনেক বেশি উপাদানের উপস্থিতি লোগোকে বিভিন্নভাবে ক্ষতিগ্রস্থ করে। আকার ছোটো করলে অনেক বিষয় ফুটে ওঠেও না। তাই লোগো বেশি জটিল এবং ডিটেইল করা উচিত নয়।
  • উপযুক্ত ফন্ট নির্বাচন করতে না পারা : লোগো ডিজাইনের ক্ষেত্রে যে ভুলগুলো করতে দেখা যায়, তার মধ্যে অন্যতম এটি। অনেক সময় দেখা যায়, লোগোর সাথে কোন ফন্টটি উপযুক্ত আমরা তা বুঝে উঠতে পারি না সেভাবে। একটি সুন্দর লোগো ডিজাইনের অন্যতম শর্ত হলো সঠিক ফন্ট স্টাইল নির্বাচন করা।
  • অনেক বেশি ফন্ট ব্যবহার করা : লোগোতে অনেক বেশি ফন্ট ব্যবহার করা একদমই উচিত নয়। এই ব্যাপারটাকে তুলনা করা যেতে পারে, কোনো ফটো অ্যালবামের সবগুলো ছবি একসাথে দেখানোর সাথে। প্রত্যেকটা টাইপফেসই আলাদা হয়ে থাকে। যে কারণে একটি লোগোতে অনেক বেশি ফন্টের ব্যবহার কনফিউশানের জন্ম দেয়। তাই ভালো হয় সর্বোচ্চ দুটো টাইপফেস ব্যবহার করা।
  • অন্যের লোগো কপি করার মনোভাব : লোগো ডিজাইনের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড়ো ভুল হলো অন্যের লোগো কপি করার চেষ্টা, যেটা দূর্ভাগ্যবশত বেড়ে গেছে। অনেকে দ্রুত কাজ করার জন্য এমনটা করে থাকে, যা কখনই করা উচিত নয়।

লোগো তৈরিতে যে সফটওয়্যারগুলো ব্যবহার করা যেতে পারে

ইতোপূর্বে আমি বলেছি যে লোগো ডিজাইনের ক্ষেত্রে রাস্টার গ্রাফিক ব্যবহার করা একেবারেই অনুচিত, বরং ভেক্টর গ্রাফিক সফটওয়্যার ব্যবহার করাই একজন পেশাদার ডিজাইনারের পরিচায়ক। আর তাই একটা সুন্দর দৃষ্টিনন্দন ডিজাইনের লোগোর ভেক্টর গ্রাফিক আউটপুট পেতে চাইলে, লোগোটি ডিজাইন করার জন্য একজন পেশাদার ডিজাইনার হিসাবে আপনি অ্যাডোবি ফটোশপ (Adobe Photoshop)  অ্যাডোবি ইলাস্ট্রেটর (Adobe Illustrator)-এর সহায়তা গ্রহণ করতে পারেন।

এই দুটো সফটওয়্যার সাধারণত লোগো ডিজাইনের কাজে সবচেয়ে বেশি কার্যকরী বহুল ব্যবহৃত ভেক্টর গ্রাফিক সফটওয়্যার। এছাড়াও অ্যাফিনিটি ডিজাইনার (Affinity Designer) নামক একটি সফটওয়্যার আজকাল বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।

এগুলো ছাড়াও গ্রাভিট ডিজাইনার (Gravit Designer), যেটা কিনা সবচেয়ে ভালো অনলাইন লোগো সফটওয়্যার হিসাবে কারো কারো পছন্দের। এছাড়াও হ্যাচফুল (Hatchful), ভেক্টর (Vectr), লুকা (Looka), ইঙ্কস্কেপ (Inkscape) কোরেলড্র (CorelDRAW)-এর মতো সফটওয়্যারগুলো ব্যবহার করতে পারেন।

কীভাবে লোগো কপিরাইট নিবন্ধন করাবেন

চাইলেই আপনি আপনার প্রতিষ্ঠানের লোগোটি কপিরাইট নিবন্ধন করিয়ে নিতে পারবেন কপিরাইট নিবন্ধন অফিস থেকে। এই মর্মে কপিরাইট অফিসে আবেদন করতে হবে। আর সেজন্য আপনার যা যা লাগবে :

  • যে লোগোটির নিবন্ধন করাতে চাচ্ছেন সেটির ছবি
  • লোগো প্রতিটি অংশের সুস্পষ্ট বিবরণ দিতে হবে
  • যে পণ্য বা সেবার বিপরীতে লোগোটি ব্যবহার করা হবে, উক্ত পণ্য বা সেবার ধরন সম্পর্কে ধারণা দিতে হবে
  • আবেদনকারীর নাম, ঠিকানার সাথে জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপিও জমা দিতে হবে

উল্লেখিত কাগজপত্রগুলো সঙ্গে নিয়ে আপনার প্রথমে যেতে হবে বাংলাদেশ পেটেন্ট, ডিজাইন ট্রেডমার্ক অধিদপ্তরের অফিসে। সেখানে গিয়ে আপনাকে ট্রেডমার্ক- (TM-1) ফরমটি সংগ্রহ করতে হবে। চাইলে অনলাইন থেকেও ফরমটি সংগ্রহ করা যাবে। এরপর কম্পিউটারের মাধ্যমে ফরমটি পূরণ করে নিতে হবে। তারপর নির্ধারিত ফি ব্যাংকে জমা দিয়ে TM-1 ফরম, ব্যাংক জমা রসিদ এবং অন্যান্য কাগজপত্রগুলো বাংলাদেশ পেটেন্ট, ডিজাইন ট্রেডমার্ক অধিদপ্তরের তথ্য সেবা কেন্দ্রে জমা দিতে হবে। বিনিময়ে তারা আপনাকে প্রাপ্তি স্বীকার রসিদ প্রদান করবেন। এরপর পেটেন্ট, ডিজাইন ট্রেডমার্ক অধিদপ্তর আপনার আবেদনটি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখবেন। যদি সবকিছু ঠিকঠাক থাকে তাহলে তারা আপনাকে লোগোটি পত্রিকায় প্রকাশের অনুমতি দেবে।

সংবাদপত্রে লোগোটি প্রকাশের অনুমতি পাওয়ার পর, আপনাকে নির্ধারিত ফি প্রদান করতে হবে। সংবাদপত্রে প্রকাশের উদ্দেশ্য হলো আপনার লোগোটি নিয়ে কোনো ব্যক্তি বা অন্য কোনো প্রতিষ্ঠানের কোনো প্রকার আপত্তি রয়েছে কিনা তা যাচাই করা। সংবাদপত্রে লোগোটি প্রকাশের তারিখ থেকে পরবর্তী দুই মাসের মধ্যে কারোর কোনো আপত্তি থাকলে পেটেন্ট, ডিজাইন ট্রেডমার্ক অধিদপ্তরে লিখিত অভিযোগ জমা দিতে হবে। যদি কেউ এই সময়ের মধ্যে অভিযোগ দাখিল না করে, তবে লোগোটি আপনার প্রতিষ্ঠান/পন্য/সেবার নামে রেজিস্ট্রেশন করে দেওয়া হবে। প্রমাণস্বরূপ আপনাকে তারা একটি সার্টিফিকেট বা সনদ প্রদান করবে।

নিবন্ধনের পর আপনার লোগোটি কেবল আপনিই ব্যবহার করতে পারবেন। অন্য কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান যদি একই লোগো ব্যবহার করে, তবে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা যাবে। নিবন্ধনকৃত লোগো নকল করলে ট্রেডমার্ক আইন, ২০০৯ এবং দণ্ডবিধি ১৮৬০ অধীনে নকলকারী ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান সর্বোচ্চ তিন বছরের কারাদণ্ডসহ তিন লক্ষ টাকা পর্যন্ত অর্থদণ্ডের সাজা হতে পারে।

লোগো ডিজাইন গ্রাফিক ডিজাইনের অন্যান্য সেক্টরে ক্যারিয়ার নিয়ে বাংলাহাবে প্রকাশিত হবে আরো লেখা। বাংলাহাবের সাথেই থাকুন।

তথ্যসূত্র

barclayperkin
smashingmagazine
wikipedia
বাংলাদেশ পেটেন্ট, ডিজাইন ট্রেডমার্ক অধিদপ্তর

11 Different Types Of Logos
01. Lettermarks Or Monogram Logos.02. Logotypes Or Wordmarks.
03. Logo Symbols.
04. Abstract Logos.
05. Mascot Logos.
06. Combination Marks.07. Letterforms.
08. Emblem Logos.
09. Slime Logos
10. Fonts Inside A Shape
11. Dynamic Mark


01. Lettermarks Or Monogram Logos.
        a. Logo Design in Illustrator
        b. 
02. Logotypes Or Wordmarks.
       a. 
03. Logo Symbols.